লাল চিনি কিভাবে তৈরি হয়

Nov 02, 2023
History
লাল চিনি কিভাবে তৈরি হয়
হাতে বানানো লাল চিনি কিভাবে তৈরি হয় জানেন কি?
আজকে আপনাদের সাথে শেয়ার করব লাল চিনি তৈরির প্রক্রিয়া। জেনে অবাক হবেন, কোন প্রকার মেশিনের সাহায্য ছাড়া, কৃষকের জ্বালা ঘরে আঁখের রস জ্বাল দিয়ে সম্পূর্ণ হাতে তৈরি হয় লাল চিনি বা ব্রাউন্ড সুগার। পাঁচটি ধাপে তৈরি হয় পুষ্টিকর সুস্বাদু লাল চিনি।
আঁখ একটি দীর্ঘ মেয়াদী ফসল। প্রথম ধাপে, আঁখের মৌসুমে বা শীতকালে আট থেকে দশ মাস বয়সী আঁখ কেটে কৃষকেরা ফসল সংগ্রহ করে থাকেন।
দ্বিতীয় ধাপে, সংগ্রহকৃত আঁখ থেকে আঁখের রস সংগ্রহ করা হয়। এই রস সংগ্রহ করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় মাড়াই। আর আঁখ মাড়াইয়ের স্থানকে বলা হয় খোলা।
আঁখ কেটে নেওয়ার পর মাঠে অথবা কৃষকের বাড়ির উঠানে খোলা তৈরি করে সনাতন পদ্ধতিতে গরু দিয়ে যাতা ঘুরিয়ে আঁখ থেকে রস সংগ্রহ করা হত। এই পদ্ধতিটি বেশ প্রাচীন। তবে বর্তমানে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মাড়াই যন্ত্রে আঁখ মাড়াই করে রস সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
তৃতীয় ধাপে, সংগ্রহকৃত আঁখের রস পাতলা নেট বা জালের সাহায্যে ভাল ভাবে ছেঁকে নেওয়া হয়। এরপর সেঁকে নেওয়া রস পাঠিয়ে দেওয়া হয় জ্বালা ঘরে। এই জ্বালা ঘরে বাকি দুই ধাপে লাল চিনি তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়।
চতুর্থ ধাপে, সেঁকে নেওয়া কাঁচা রস জ্বালা ঘরে এনে নিদৃষ্ট তাপে বড় হাড়িতে করে পাকানো হয়। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট জ্বাল দেয়ার পর যখন আঁখের রস ঘন খয়েরি বর্ণ ধারণ করে এবং সাদা বুটি ওঠে তখন পাকানো রস চুলা থেকে নামিয়ে নেওয়া হয় পরবর্তী ধাপের জন্য। এই পুরো জ্বাল দেয়ার বা পাকানোর প্রক্রিয়ায় আঁখের রস ঘন করার জন্য বড় হাতার সাহায্যে ক্রমাগত নাড়তে থাকতে হয়।
পঞ্চম ও শেষ ধাপে, পাকানো খয়েরি বর্ণের ঘন আঁখের রসকে ২৫ থেকে ৩৫ মিনিট পর্যন্ত ডাং নামক বিশেষ পদ্ধতিতে তৈরি কাঠের টুকরার সাহায্যে নাড়াতে থাকতে হয়। এভাবে নাড়তে নাড়তে পাকানো রস ঠান্ডা হতে থাকে আর পাউডার আকারে তৈরি হতে থাকে ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি।
বাংলাদেশের রয়েছে লাল চিনি তৈরির দীর্ঘ ২০০ বছরের ইতিহাস আর ঐতিহ্য। হাইড্রোজ, বোন চারকোল সহ সকল প্রকার ক্ষতিকারক ক্যামিকেলের মিশ্রণ ছাড়া হাতে তৈরি হয় পুষ্টিগুনে ভরপুর লাল চিনি। বাংলার মিষ্টি ঐতিহ্য।